
জমির দলিল সংশোধন করার কারন বা নিয়ম | দলিল সংশোধন করা হয় কেন?
জমির দলিল সংশোধন করার কারন বা নিয়ম –জমি রেজিস্ট্রির পর অনেকের বেলায় দেখা যায় অনেক জায়গায় দলিলে ভুল আছে এ নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৩১ নং ধারা অনুযায়ী দলিল রেজিস্ট্রির পর দাগ খতিয়ান মৌজা বা নামের কোন ভুল থাকলে তা ৩৬মাস মানে তিন বছরের মধ্যেই সংশোধন করা যায়।
এরূপ ভুল হলে দেওয়ানী আদালতে ৩৬মাস মানে তিন বছরের মধ্যে দলিল সংশোধনের মামলা করতে হবে। এই মামলার যে রায় হয় তাই হলো সংশোধন দলিল।
এই মামলার রায়ের ১ কপি আদালত হতে সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রার নিকট পাঠানো হলে সাব রেজিস্টার উক্ত রায়ের আলোকে সংশ্লিষ্ট ভলিউম সংশোধন করে নিবেন ফলে নতুন কোন দলিল করার প্রয়োজন হবে না।
কি কারনে দলিল সংশোধন করা হয়
রেজিস্ট্রি করার পর দলিল যদি দাগ নাম্বার, খতিয়া, নামে, ক্ষেত্রে কোন ভুল থাকে,কিংবা প্রতারণার শিকার হয়ে কেউ যদি ভুল সম্পত্তি ক্রয় করে তাহলে সেই দলিলের সংশোধন প্রয়োজন হয়। দলিলের সংশোধন করার বেশ কিছু কারণ বিদ্যমান।
১।প্রতারণার শিকার হয়ে যদি ভুল হয় তা সংশোধন করতে পারেন।
২।পক্ষগনের পারস্পরিক ভুলের জন্য যদি দলিল ভুল ভাবে লিখিত হয় সংশোধন করতে পারেন।
৩।পক্ষগনের প্রকৃত মনোভাব যদি দলিলে ভুল ভাবে লিখিত হয় সংশোধন করতে পারেন।
৪।পক্ষগণের প্রতারণা কিংবা ভুল যদি আদালত দলিল কার্যকর করার সময় নির্ণয় করতে পারেন।
৫।কোন চুক্তিপত্রের সাথে যদি ভগবানের ইচ্ছা পরস্পর বিরুদ্ধ হয়ে দাঁড়ায় চুক্তিপত্রটি আদালত সংশোধন করতে পারবেন।
কিভাবে দলিল সংশোধন করা হয়
পর্দাতে দাগ খতিয়ান কিংবা নামের ছোটখাটো কোন ভুল ধরা পড়লে কিংবা যে ভুল সংশোধন করলে দলিলের মূল কাঠামো বা স্বত্বের কোন পরিবর্তন ঘটবে না সেরূপ ভুল সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্টার অফিসে বরাবরে আবেদন করা যাবে। সাব রেজিস্টার অফিসে এ ধরনের ছোটখাটো ভুল সংশোধন করতে পারবেন। এটাকে বলা হয় ভ্রম সংশোধনী দলিল।
রেজিস্ট্রেশন বিধিমালয়ের ৭৪ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “কোন রেজিস্ট্রিট মৃত ব্যালেন্স স্টেশনের জন্য গৃহীত দলিলের ভুল ত্রুটি থাকলে এবং তা সংশোধনের জন্য কোন সম্পূরক দলিল রেজিস্ট্রেশনের জন্য, উক্ত ভুলত্রুটি প্রমাণের জন্য মূল দলিল বা অবিকল নকলসহ দাখিল করা হলে যে রেজিস্টার বহিতে মুলদলিলটি নকল করা হয়েছে তার মার্জিনী এইরূপ সংশোধনের বিষয়ে সাব রেজিস্টার একটি টীকা লিখবেন যে, এই দলিলটি অমুক কার্যালয়ের এত সনের এত নং দলিল মূলে সংশোধন করা হইয়াছে।
রেজিস্ট্রেশন বিধিমালার ৭৪ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে,যে রেজিস্টার বহিতে মূল দলিলটি নকল করা হয়েছে তা যদি সদর রেকর্ডরুমে প্রেরিত হয়ে থাকে তাহলে যে সাব রেজিস্টার ভ্রম সংশোধন দলিল রেজিস্ট্রি করেছেন তিনি জেলার রেজিস্ট্রারকে তার নিজের স্বাক্ষরের সংশোধনী সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় টিকা যথাযথ রেজিস্টার বহিতে লেখার জন্য অনুরোধ করে পত্র লিখবেন।
ভ্রম সংশোধন দলিলের রেজিস্ট্রি খরচ
পর্দাতে দাগ খতিয়ান কিংবা নামের ছোটখাটো কোন ভুল ধরা পড়লে কিংবা যে ভুল সংশোধন করলে দলিলের মূল কাঠামো বা স্বত্বের কোন পরিবর্তন ঘটবে না সেরূপ ভুল সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্টার অফিসে বরাবরে আবেদন করা যাবে। সাব রেজিস্টার অফিসে এ ধরনের ছোটখাটো ভুল সংশোধন করতে পারবেন। এটাকে বলা হয় ভ্রম সংশোধনী দলিল।ভ্রম ও সংশোধন দলিলের রেজিস্ট্রেশন-ফি মাত্র ১০০ টাকা স্টাম্প শুল্ক ৩০০ টাকা দিতে হবে। সেই সাথে ২০০ টাকার স্ট্যাম্পে হলফনামা। এর সাথে আবার রয়েছে এন ফি। বাংলায় প্রতি ৩০০ শব্দ বিশিষ্ট এক পৃষ্ঠা বা তার অংশবিশেষের জন্য ১৬ টাকা।
আবার ইংরেজি ভাষার হলে ভ্রম সংশোধন ২৪ টাকা।স্ট্যাপ সুলকমুষ চাইলে স্টাম্প আইন ১৮৯৯ এর ১৬ ধারা মোতাবেক ২০ টাকার কোর্ট ফিসহ আবেদন করতে হবে। তাহলেই হয়ে যাবে ভ্রম সংশোধনী দলিল।
দলিল সংশোধনের মেয়াদ বা সময়কাল
তামাদি আইন হল সেই আইন যার মাধ্যমে কোন মামলা বা অন্য কোন বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সময়ের নিয়ম মানতে হয় সেই নিয়ম সমৃদ্ধ আইন। তামাদি আইন কি ? তামাদি শব্দটি আরবী শব্দ , এর আভিধানিক অর্থ হলাে কোন কিছু বিলুপ্ত হওয়া কিংবা বাধা প্রাপ্ত হওয়া । মূলত ১৯০৮ সালের তামাদি আইন একটি পদ্ধতিগত আইন ।তামাদি আইন ১৯০৮ এর ৯৫ এবং ৯৬ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে, দলিল সংশোধনের তামাদি মেয়াদ হচ্ছে ৩৬মাস মানে তিন বছর।
তবে এই ক্ষেত্রে উল্লেখ খোজে তামাদি মেয়াদ গণনা শুরু হবে যেদিন হতে বাদী মানে আপনি আপনার দলিলের ভুল বা প্রতারণা বা প্রকৃত উদ্দেশ্য প্রকাশের ব্যর্থতা সম্বন্ধে জানতে পারবেন সেই দিন থেকে তিন বছরের মধ্যে দলিল সংশোধনের মামলা দায়ের করতে হবে।দেওয়ানী মামলায় সব সময় তামাদি মেয়াদ খেয়াল রাখতে হয় ।একটি নির্দিষ্ট সময়ের মতো মামলা দায়ের না করলে মামলাটি খারিজ হয়ে যাবে তাই দলিল সংশোধনের মেয়াদ বা সময়কালের বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে।
কে বা কারা দলিল সংশোধন মামলা দায়ের করতে পারবেন
দলিল সংশোধনের মামলা করতে চাইলে ব্যক্তিকে অবশ্যই দলিলের পক্ষে হতে হবে কিংবা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বৈধ প্রতিনিধি হতে হবে।কোন প্রকার সংশ্লিষ্টতা না থাকলে যে কেউ একটি দলিল সংশোধনের মামলা করতে পারবে না বাদী হিসেবে আপনাকে দলিলের পক্ষ বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বৈধ প্রতিনিধি হতে হবে। যারা দলিল সংশোধনের মামলা করতে পারবে তারা হলো
১।দলিলের যেকোনো পক্ষ।
২।দলিলের যেকোনো পক্ষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিগণ।
৩।দলিলের যেকোনো পক্ষের উত্তরাধিকারীগণ।
৪।দলিলের যে কোন পক্ষের নিকট হতে হস্তান্তর গ্রহীতা গন, এর মানে দলিলের যে পক্ষটি হস্তান্তর করছে, তাদের কাছ থেকে কোনো সম্পদ বা অধিকার গ্রহণকারী ব্যক্তিরা হচ্ছেন হস্তান্তর গ্রহীতা।
৫।দলিলের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ।
সর্বোপরি, দলিল সংশোধনের এই বিধানটি দেওয়া হয়েছে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ৩১ নং ধারায়।যদিও ৩১ ধারায় এই দলিলের পরিধি অনেক বড় করে দেখানো হয়েছে ৩১ ধারায় বলা হয়েছে যে, একটি লিখিত চুক্তি বা অন্য কোন লিখিত দলিলকে সংশোধন করার জন্য ৩১ ধারার ব্যবহার করা যেতে পারে।
কি কি শর্তে দলিল সংশোধন করা যায়?
১। দলিলের কোন পক্ষের প্রতারণা।
২। পক্ষসমূহের পারস্পরিক ভুল।
৩। একটি দলিল বা চুক্তির মধ্যে যে উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য ছিল তা সঠিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি বা স্পষ্টভাবে বোঝানো হয়নি।
কে কে দলিল সংশোধন মামলা করতে পারবে?
১। দলিলের যে কোন পক্ষ।
২। দলিলের পক্ষ সমূহের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বৈধ প্রতিনিধি।
দলিল সংশোধনের তামাদি মেয়াদ কত বছর?
তামাদি আইন ১৯০৮ এর অনুচ্ছেদ ৯৫ এবং ৯৬ অনুযায়ী করা তামাদি মেয়াদ ৩ বছর।
👉🙏লেখার মধ্যে ভাষা জনিত কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে অবশ্যই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে
আরও পড়ুন-জমির দলিল সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য
অনলাইনে জমির খতিয়ান যাচাই করার সঠিক পদ্ধতি
জমির পুরাতন দলিল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম
বিশেষ দ্রষ্টব্য -উপরের ইনফরমেশনগুলো সম্পূর্ণভাবে ইন্টারনেট থেকে কালেক্ট করা। এজন্য কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
Rakib Hasan
7 months agoপোস্টটিকে ভালো লেগেছে আরো আপডেট কিছু জানতে চাই